স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এমপি বলেছেন, ফুলের রাজধানী হিসেবে বিখ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী এলাকায় করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত ফুলচাষিদের মধ্যে ৪ শতাংশ সুদে এক কোটি টাকার প্রণোদনা ঋণ বিতরণ করা হবে। এছাড়া রক্তস্নাত জাতীয় শোক দিবসকে স্মরণ করে ফুলের রাজধানী গদখালীর ফুলচাষিদের জন্য ৫ কোটি টাকা সিডমানি দিয়ে বঙ্গমাতা পল্লী সমবায় সমিতি গঠন করা হবে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের স্মৃতিকে স্মরণে রাখতে দেশজুড়ে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিটি উপজেলায় সমিতি গঠন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।
৪৬তম জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে সোমবার রাতে ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক ভার্চুয়াল স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্ত্যব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, বঙ্গমাতা জাতির মুক্তির জন্য এক অদৃশ্য শক্তি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে উজ্জীবিত করেছেন, নেপথ্যে থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। আমৃত্যু জীবনসঙ্গী হিসেবে পরম মমতায় বঙ্গবন্ধুকে আগলে রেখেছেন এই মহীয়সী নারী। বাঙালি জাতির সুদীর্ঘ স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতিটি পদক্ষেপে তিনি বঙ্গবন্ধুকে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন। তার অবদান স্মরণীয় করে রাখতে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ এই মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু সমবায়কে সংবিধানের মালিকানার দ্বিতীয় খাত হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন গ্রামে গ্রামে বহুমুখী সমবায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে। বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ছিল— একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, যেখানে ধর্মীয় উগ্রতা থাকবে না, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য থাকবে না। বঙ্গবন্ধুর দর্শন ছিল— মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান দূর করা, ধর্মীয় ও অন্যান্য বৈষম্য দূর করে সবাইকে একটি প্ল্যাটফরমে আনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার সেই অসমাপ্ত কাজটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মুকুলের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন যশোর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনির, ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাহমুদ, মুক্তিযুদ্ধকালে ঝিকরগাছা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা মাস্টার এনামুল কবির ও সাংবাদিক আবুল কাশেম।
অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনির বলেন, ইতিহাসের জঘন্যতম, নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে। এদিন গোটা বাঙালি জাতিকে কলঙ্কিত করেছিল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তে লিপ্ত হয়ে সেনাবাহিনীর উচ্ছৃঙ্খল কিছু বিপথগামী সদস্য। সেদিন রাতে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের ঐতিহাসিক ভবনে ঘাতকের নির্মম বুলেট বিদ্ধ করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বুক। সপরিবারে হত্যা করা হয় জাতির পিতাকে।
তিনি আরও বলেন, ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করলেও তার স্বপ্ন ও আদর্শের মৃত্যু ঘটাতে পারেনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নপূরণে কাজ করে যাচ্ছেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে দেশের প্রতিটি গ্রামে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। ডিজিটাল ইন্টারনেটের আওতায় এসেছে পুরো দেশ।
ক্ষতিগ্রস্থ ফুলচাষিদের জন্য প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের কাছে ৪ শতাংশ সুদে আরও ঋণ সুবিধা দাবি করে ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগ। প্রতিমন্ত্রী এ সময় ৪ শতাংশ সুদে সিড মানি হিসেবে ৫ কোটি টাকা প্রণোদনা ঋণ বিতরণ করবেন বলে জানান।
উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা এনামুল হক মনির সঞ্চালনায় আলোচনাসভায় আরও অংশ নেন নাভারণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাজান আলী, শংকরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম, নাভারণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বুলি, নির্বাসখোলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক সাংবাদিক এম.আলমগীর প্রমুখ।